কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বরাদ্ধ করা ঈদুল ফিতরের উপহার (ভিজিএফ) চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপকারভোগীদের অভিযোগ ১০ কেজির জায়গায় সাড়ে ৮ কেজি থেকে ৯ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজ করা হয়েছে সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কথায়। ফলে সরকারি বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৃত অতিদরিদ্র, অসহায় ও দুঃস্থ পরিবার।
রবিবার, ২৩ মার্চ সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চাল বিতরণে এ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে কম দেওয়ার পর প্রায় ৬০ জনের ৬০০ কেজি চাল কম হয়েছে।
সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দানাপাটুলী ইউনিয়নে চাল নিতে আসা উপকারভোগীদের দীর্ঘ লাইন। হাতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরযুক্ত ভোটারকার্ডের ফটোকপি। পরিষদের চাল দেবার ঘরে দেখা যায় কয়েকজন ব্যক্তি ওজন করে বালতি দিয়ে চাল বিতরণ করছে। এতে ১০ কেজি চালের মধ্যে সাড়ে ৮ কেজি থেকে সাড়ে ৯ কেজির মতো করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে ১০ (দশ) কেজি হারে বিনামূল্যে ভিজিএফ খাদ্যশস্য (চাল) বিতরণ করার কথা। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের ২ হাজার ৮শ, ৬৩ জন উপকারভোগীদের মধ্যে ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও সাড়ে ৮ কেজি থেকে ৯ করে দেয়া হয়েছে। এসব কার্ড বিতরণে প্যানেল চেয়ারম্যান স্বজনপ্রীতি করেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণে সরকারি অনুমোদিত ১০ কেজি চালের কম অর্থাৎ ৮-৯ কেজি করে পরিমাপে দিচ্ছে। যারা স্বাবলম্বী ও তাদের চাল নেওয়ার দরকার নেই তারাও কার্ডের মাধ্যমে চাল নিচ্ছেন। মেম্বার-প্যানেল চেয়ারম্যানরা অনেককে একাধিক কার্ড দেন। পরে তারা সে চাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কার্ডধারী চাল নিতে আসা ব্যক্তিরা জানান, ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে আট থেকে নয় কেজি করে চাল দিচ্ছে চেয়ারম্যান।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাসেল মাহমুদ বলেন, দুঃস্থ ও অসহায়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ভিজিএফ কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। এই ভিজিএফ’এর চাল বরাদ্ধে এবং বিতরণে উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ। এতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় দুঃস্থরা। এই দুর্নীতি অনিয়মের সাথে চেয়ারম্যান আমির হোসেন জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
দানাপাটুলী ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমি চেয়ারম্যান সাবকে চাল কম দেওয়ার কথা বললে কোন কিছুই করেননি।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নুরুন্নেছা খানম জানান, চাল দেয়া শুরু থেকে ২০ থেকে ৫০ গ্রাম করে কম দেয়া হয়। এখন আরো বেশি কম দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি কোন কিছু জানিনা। আমি শুধু কার্ড দেখে আঙ্গুলের ছাপ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, চাল কম হতে পারে তবে বেশি কম হওয়ার কথা না। তবে চাল সাড়ে আট থেকে নয় কেজি দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। চাল বিতরণের পর প্রায় ৬০ জনের কার্ডের চাল কম হয়েছে তা স্বীকার করে বলেন, যে চাল কম হয়েছে তা আমি নিজের টাকা দিয়ে কিনে দিয়ে দিবো।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বিডিচ্যানেলফোরকে বলেন, চাল কম দেবার কোন নিয়ম নেই। যদি এমন অভিযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply