1. admin@bdchannel4.com : 𝐁𝐃 𝐂𝐡𝐚𝐧𝐧𝐞𝐥 𝟒 :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন

পাকুন্দিয়া কটিয়াদীতে এমপি বাবার  রাজনৈতিক প্রভাবে গড়ে উঠে ছিল সুলতান বাহিনীর সাম্রাজ্য

এম এ হান্নান পাকুন্দিয়া( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি।।
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এস এম তৌফিকুল হাসান সাগর ওরফে সুলতান বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে তার বাবা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে গড়ে তুলেছিলেন সুলতানী সাম্রাজ্য। রাজনৈতিক প্রভাব আর সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করে পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী অঞ্চলে সাগরের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সুলতান বাহিনীর দুর্নীতির বেপরোয়া সিন্ডিকেট। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলা ওই সুলতান বাহিনীর লোকজন প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী এলাকায়  দোর্দণ্ড প্রতাপে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে সমাজে  আবির্ভূত হয়। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে অধুনা লুপ্ত কালিয়াচাপড়া সুগার মিলের যন্ত্রাংশ ও মালামাল পাচার, বালুমহাল, টিসিবি ডিলারশিপের মতো লাভজনক কাজগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ লাভ করে সুলতান বাহিনী। এমনকি সুলতান নিজেই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ দখল করে নেয়। সংসদ সদস্য বাবার ছায়াতলে বসে নিজ নির্বাচনি এলাকার মাত্র ৭ মাসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ম্যানেজিং কমিটি থেকে আরম্ভ করে   প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জ জেলা জুড়ে গড়ে ওঠে ভারতীয় চোরাই চিনির একটি বেপরোয়া শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নদী ও সড়ক পথে আনা  এসব চোরাই চিনি কিশোরগঞ্জ ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যেত। আর ওই চিনি চোরাচালান থেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন কথিত এই সুলতান ।  প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হতো সুলতান সাম্রাজ্যে ।

এ ছাড়া কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে ড্রেজিং বোট লাগিয়ে সুলতান বাহিনী গড়ে তোলে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলনের রমরমা বাণিজ্য। জানা যায়, এই দুই উপজেলার নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বাণিজ্য থেকেই মাসে কয়েক কোটি টাকা কামাই করে নিত কথিত সুলতান। তার বাবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরই নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে সাগর ওরফে সুলতান জানিয়ে দেন, ‘টাকা খরচ করে আমরা এমপি হয়েছি, এখন আমি সুদে-আসলে সে টাকা তুলব। এ নিয়ে যেন কারও কোনো কথা না শুনি।

এরপরই ভয়াবহ গতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে সুলতানের টাকা কামানোর মিশন। তার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের  সভাপতি নাজমুল হাসান। তার সক্রিয় নির্দেশনায় প্রতিটা ইউনিয়নে টাকার বিনিময়ে চলতো ছাত্রলীগ কমিটি দেয়ার বানিজ্য।  এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য  এসএম তৌফিকুল হাসান সাগর ওরফে সুলতানের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার রিং দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এলাকায় ওপেন সিক্রেট হিসেবে প্রচার আছে, গত ৮ মে অনুষ্ঠিত পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থনের জন্য তৎকালীন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক জুটনের কাছ থেকে সুলতান ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সুলতানকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে সুলতানের আনুকূল্য লাভ করেন জুটন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৬ এপ্রিল এমদাদুল হক জুটন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। নির্বাচনের দিন সুলতান বাহিনী তার পক্ষে ভোটে ব্যাপক অনিয়মসহ একাধিক কেন্দ্র দখলেও ভূমিকা পালন করেন। উপরন্তু ফলাফল ঘোষণার সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে এমদাদুল হক জুটনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে সুলতান বাহিনীর লোকজন। এ ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে ভোটভর্তি ব্যালটবাক্স আদালতের জিম্মায় রাখা হয়। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের সময় গত ৪ অগাস্ট সংসদ সদস্য সোহরাব ও তার ছেলে সাগর ওরফে সুলতানের নেতৃত্বে পাকুন্দিয়া সদরে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানো হয়। ৫ অগাস্ট পটপরিবর্তনের পর সুলতান বাহিনী উপজেলার দরগা বাজারে নিজ বাসভবনকে ঘিরে শক্ত অবস্থান নেয়। সুলতান বাহিনীর পাহারায় গত ১২ই অগাস্ট সেখানে একটি সভাও হয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার ক্ষোভের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পিতা-পুত্র পাকুন্দিয়া ত্যাগ করে আত্ম গোপনে চলে যায়।   

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং