
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পুলেরঘাট বাজার একটি ব্যস্ততম বানিজ্য কেন্দ্র। বাজারটির বুক ছিঁড়ে মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সড়ক কিশোরগঞ্জ টু ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক।
ব্যস্ততম এ সড়কের দু’পাশের ফুটপাথ দখল করে নিয়েছে কিছু অস্থায়ী দোকান। ফলে পথচারীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ফুটপাত দিয়ে চলাফেরা করতে না পেরে পথচারীরা বাধ্য হয়েই চলাফেরা করছেন মূল সড়ক দিয়ে। এতে করে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন নানা দুর্ঘটনায়।
একদিকে ফুটপাথে অবৈধ দোকানপাট অন্যদিকে সারিসারি সিএনজি, অটো রিকসা সড়কের পাশে দাঁড়ানোর ফলে পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন না।
পথচারী ও এলাকাবাসীরা বলছেন ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের জন্য হলেও এখানে দোকান বসিয়ে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা কারা সবাই জানে কিন্তু কেউ কিছু বলে না।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাস্তার পাশের ঘর মালিকরা ফুটপাতে বসা দোকান থেকে টাকা নিয়ে চুপ থাকে তাই ভোগান্তি শুধু পথচারীদের। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে অভিযান চালায় ঠিকই কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়না। এক পাশ থেকে উচ্ছেদ করা হয় আবার অন্য পাশ থেকে অবৈধ দখল শুরু হয়।
মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ফুটপাত দখল করে বসে আছে প্রায় ২০টি অস্থায়ী পান দোকান, কসমেটিকস, ফল দোকান ও চা সহ অন্যান্য দোকান।
এলাকাটিতে সিএনজি, রিকশা ফুটপাতের দোকান থাকায় পথচারীদের হাঁটার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, ‘ফুটপাত মানুষের হাঁটার জন্য, এটা সবার জানা। আবার এটাও সবার জানা যে এটি সব সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর দখলে থাকে। ফলে পথচারীদের ভোগান্তি যেন শেষ হওয়ার নয়।
কারা এসব দোকান বসাচ্ছে বিষয়টি সবার জানা থাকলেও সেটি বন্ধ করতে পুলেরঘাট বাজার বণিক সমিতির কোন উদ্যোগ দেখা যায়না।
এখানকার ফুটপাতে বসা এক ফল দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দোকান বসানোর জন্য পাশের ঘর মালিকদের টাকা দেওয়া লাগে। প্রতিদিনই তারা এসে টাকা নেয়। আমার দোকানদারি করা দরকার, তাই টাকা দিই ভাই।
একদিকে অস্থায়ী দোকান, অন্যদিকে ফুটপাতেই রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। যার জন্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পথচারীদের চলাচল। যেমনটা বলছিলেন কালিয়াচাপড়া চিনির কল উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমন। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুটপাতের মধ্যে যদি খুঁটিই দেবে! তবে ফুটপাত দিয়ে লাভ কি? শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামলে সরকার কিছু ব্যবস্থা নেয়। পরে যা হবার তাই হয়। সরকার এ বিষয়ে আইন সংশোধনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে; কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই।
ফুটপাত অস্থায়ী দোকানিদের দখলে আর মূল সড়কের পাশের অর্ধেক দখল করে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা। তাই রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটারও সুযোগ নেই। মসজিদে যাচ্ছিলেন মুসুল্লি রহমান, তিনি বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারি না। একদিকে জায়গা নেই, অন্যদিকে কিছু মানুষ অহেতুক ধাক্কা দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে চলাফেরা করায় খুব সমস্যায় পড়তে হয়। সব সময় কিছু বলাও যায় না। এই সড়কটিতে রিকশার জন্য নিচের পথটিও ব্যবহার করা যায় না। দুর্ঘটনার ভয় থাকে। তাই পথ চলতে বলা যায় এক ধরনের যুদ্ধই করতে হয় নারীদের।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুলেরঘাট বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ভূইয়া বলেন, আগে পরিষ্কার করিয়েছি কিন্তু এখন আবার দোকান বসে গেছে। মাঝেমধ্যেই অস্থায়ী দোকানগুলো উঠিয়ে দিলেও আবার বসে যায়। প্রশাসন এখানে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এমনটা হতো না। আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে দোকান বসার সুযোগ করে দিচ্ছে। পেছনে বড় ধরনের শক্তি না থাকলে উঠিয়ে দেওয়ার পরপরই এভাবে আবার দখল হতো না। দু-এক দিনের মধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান করা হবে।
Leave a Reply