1. admin@bdchannel4.com : 𝐁𝐃 𝐂𝐡𝐚𝐧𝐧𝐞𝐥 𝟒 :
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ন

মিঠামইনে প্রধান শিক্ষকের নামে দুর্নীতির মামলা

মোক্তার হোসেন গোলাপ, মিঠামইন(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধি।।
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২৮৮ বার পড়া হয়েছে

 

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামই উপজেলার ঘাগড়া আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে কিশোরগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত তার মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে,  ঘাগড়া আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ে সাইফুল ইসলাম প্রথমে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। বিগত ২০১৪ সাল থেকে তিনি তার সহযোগীদেরকে নিয়ে দুর্নীতি রাজত্ব কায়েম করে এসেছেন। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও স্থানীয় লোকজন কোন প্রতিকার পাননি।  তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব শালী ব্যক্তিদের সহায়তায় নিজে প্রভাব খাটিয় বারবার এডহক কমিটি দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছেন। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে বেআইনিভাবে প্রধান শিক্ষকের পদে বসে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সাইফুল ইসলাম বিগত ২০২২ সালে অনির্বাচিত একটি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মিঠামইন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছোট বোন আছিয়া আলম। অবৈধ পরিচালনা কমিটি ঘোষণার দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামও তার সহযোগীরা বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন। পরীক্ষার ফরম ফিলাপের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বিনা রশিদে প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিবছর অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ।ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এই চাঁদা সেই চাঁদা আদায় করে আত্মসাত করেছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের বই কালো বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে বইগুলো আটক করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তখন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং আটকদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীরা বই বিক্রির প্রায় ২ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ার করে নেয়। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ২০১৯ সালে নির্বাচনের মনোনয়ন ফরমের নাম করে ৬০ লাখ টাকা নির্বাচিত প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অথচ ওই সময় তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেননি।

প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ২০১৮ সালের শেষ ধাপে বিএম আশরাফুলসহ অন্যান্য ছাত্রদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল জব্বার আদালতে একটি মামলাও করেছিলেন । মামলা নং ২/২০১৮।পরবর্তীতে আব্দুল জব্বার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের চাপের মুখে পড়ে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন।

ঘাগড়া আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ঢাকা অঞ্চল ঢাকা কে স্মারক নং মাউশি /ঢাঅ/তদন্ত /২০১৭তারিখ ৯/৫/২০১৮মূলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. ইউসুফ বিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করেন এবং প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখিনি।

নৈশ্য প্রহরী মাহাতাব উদ্দিনকে দীর্ঘ ৬ বছর বিদ্যালয় অনুপস্থিত থাকার পর ঘুষের বিনিময়ে পুনঃনিয়োগ করা হয়। নৈশ প্রহরী মাহাতাব উদ্দিন একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে সাড়ে ৫ মাস কিশোরগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তার বেতন উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাহতাব উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান বেতন উত্তোলনের বিষয়টি সঠিক না। স্থানীয় সাংবাদিক গোলাপ ভূঁইয়া এই প্রতিবেদককে জানান এই বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের ভূমির মালিক বিদ্যালয় না। আদালতে নিষেধাজ্ঞা মোকাদ্দমা থাকার পরও মালিকানা ভূমির উপর মিঠামইন উপজেলা প্রশাসনের এবং প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চার তলা একটি ভবন নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া ভূমির উপরে থাকা ২০/৩০টি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। গাছ কাটার সময় পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কারো অনুমতি নেওয়া হয়নি এমন কি মালিকদের কাছ থেকে ও। প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে এলাকার লোকজনের কাছে পরিচিত। তাকে বিভিন্ন সময় ঢাক ঢোল পিঠেয়ে মঞ্চে উঠে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়টিকে তার বাসা  হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। বিদ্যালয়টি অলিখিত বন্ধ ঘোষণা করে বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল এ প্রতিবেদককে আরো জানান, প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের নেতার ছোট বোন বিদ্যালয়ে ঢুকে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ একেবারে নষ্ট করে দিয়েছেন। তারা মিলে মিশে বিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম পাহাড় সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরো জানান ৪/৫বছর ধরে কোন প্রকার অডিট এমনকি অভ্যন্তরীণ হিসাব নিকাশ নেই বললেই চলে। তিনি আরো জানান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মিঠামইন থানায় দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নেওয়ায় গত ১৫/৮/২০২৪ তারিখে কিশোরগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করি। মামলা নং ৫/২০২৪। বিজ্ঞ আদালত মামলার শুনানি শেষে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে আদেশ দেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং