ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, বৈশাখ-জৈষ্ঠ মিলে হয় গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকালের পুরো বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যের শুরুর দিকে যেমন কাঁচা আম পাওয়া যায় তেমন জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে মিলে রসালো পাকা আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু। যে কারণে এই মাসকে মধু মাস বলা হয়। এই মধু মাসে মৌসুমি ফল আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর পাশাপাশি পাওয়া যায় তালের নরম শাঁস। তালের শাঁস খাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
অনেক ফল যখন ফরমালিনের বিষে নীল, তখন ফরমালিন ও কীটনাশকের ছোঁয়া ছাড়া তালের শাঁসের কদর বেড়েছে কিশোরগঞ্জে। তালের নরম শাঁসকে এখানকার স্থানীয় ভাষায় তালের আশ বলা হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারে ও পথের মোড়ে এই সুস্বাদু তালের আশ বিক্রি করতে এবং ক্রেতাদের কিনে খেতে দেখা যায়। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে অপরিপক্ব তাল পাইকারি দরে কিনে এনে কেটে বিক্রি করছেন। নরম অবস্থায় তালের শাঁস এর দাম বেশি থাকে। এখন একটি কচি তাল ৩০/৪০ টাকা দামে বিক্রি করছেন তারা।
তবে দিন যতই যাবে তালের শাঁস যতই শক্ত হতে থাকে তখন তার দামও কমতে থাকবে। তাই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম বেশি পাওয়ার আশায় কচি তাল গাছ থেকে পেরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে তা কেটে বিক্রি করেন।
তালের শাঁস বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের এই সময়টা তালের আঁশ বিক্রি করে তারা তাদের সংসার চালান। তারা বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে, সিএনজি অটো ভ্যানস্ট্যান্ড এবং অলিতে গলিতে তালের শাঁস বিক্রি করেন।
আখড়াবাজার ব্রিজ সংলগ্ন তালের শাঁস বিক্রেতা জমির মিয়া জানান, তারা প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করেন। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে এনে গাছ থেকে পেড়ে এনে শাঁস বিক্রি করেন। তবে গাছে উঠে বাধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে অধিকাংশ সময়ে তালের শাঁস থাকে গাছে। এই সময়টার মধ্যে ব্যবসায়ীর প্রতদিনি প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ তালের শাঁস বিক্রি করেন বলে জানান। একটি শাঁস/তাল আকার ভেদে থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা। তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার ভালোই চলে বলে জানান বিক্রেতারা।
তালের শাঁস খেতে আসা আরিফ জানান, বর্তমানে বাজারে অধিকাংশ ফল ফলাদি ও শাক সবজিসহ মাছ মাংস সব কিছুই কোন না কোন ভাবে ফরমালিন অথবা নানা ধরনের কীটনাশকের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়,কিন্তু তালের শাঁসে ভেজাল কিছুই থাকে না। শতভাগ ন্যাচারাল ফল বিধায় বাজারে সব সময় এর চাহিদা বেশী থাকে, তাছাড়াও ফলটা লোভনীয় হওয়ায় বাজারে এসে আমরা নিজেরা বিক্রেতার নিকট বসে খাই এবং পরিবারের জন্য কিনে বাসায় নিয়ে যাই।
তালের শাঁসের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে ডা:সালাহউদ্দিন মিঠু বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। গরমের দিন তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে, এছাড়াও তাতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি সহ নানান ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি ও মুখের রুচি বৃদ্ধি করে।
Leave a Reply