মহর আলী। বয়স ৭৭ । বাড়ি সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায়।এই বয়সে যখন মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হয়ে ঘরে বসে নাতি নাতনিদের নিয়ে আনন্দ ফুর্তিতে দিন কাটান তখন মহর আলীর মত বৃদ্ধ মানুষকে সংসার চালাতে প্রতিদিন ভাড়া করা রিকশা চালাতে হয়।
বৃদ্ধা স্ত্রী নিয়ে দুইজনের সংসার মহর আলীর। প্রতিদিন ২শ’ টাকায় মহাজনের কাছ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালান তিনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪/৫ শ টাকা ইনকাম করেন।এর মধ্যে ২ শ টাকা দিয়ে দিতে হয় রিকশার মালিককে। বাকি ২/৩ শ টাকা দিয়ে সংসার চালান তিনি। বয়সের ভারে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না মহর আলী। তারপরও পেটের দায়ে সংসারের খরচ যোগাতে চালাতে হয় রিকশা। রিকশা চালিয়ে জোগাড় করতে হয় নিজের ও তার বৃদ্ধ স্ত্রীর খাবার।
প্রায় ৫০ বছর ধরে রিকশা চালিয়েই সংসারের খরচ জোগাড় করছেন মহর আলী।এ বৃদ্ধ বয়সে এসেও অপরের রিকশা ভাড়ায় নিয়ে রিকশা চালিয়েই আজও জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে তাকে।
শনিবার, ১৮ বিকালে রিকশাচালক মহর আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়,মহর আলীর রিকশা চালিয়ে দিনে ২-৩ শ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই কোনোভাবে বেঁচে আছেন স্বামী-স্ত্রী দুইজন।
মহর আলী বলেন, ‘আমার একজন ছেলে আছে। সে মিশুক অটোরিকশা চালায়। আমাকে কোন সাহায্য করে না। তাই নিজের ও বৃদ্ধ স্ত্রীর খাবার যোগাতে আমার নিজেরই রিকশা চালাতে হয়। ছেলে বিয়েশাদি করে আলাদা থাকে।রিকশা চালিয়ে যা টাকা পায়, তা দিয়ে ওদের সংসারই চলে না, সেখানে আমাদের কীভাবে খাওয়াবে? তাই আমি বাধ্য হয়েই রিকশা চালাই।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই গরমের মধ্যে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। কী করবো? পেটে তো খাবার দিতে হবে। তাই বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। আমার বয়স দেখে অনেকেই রিকশায় ওঠেন না। তবুও পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়’ আক্ষেপ করে বলেন বৃদ্ধ মহর আলী।
রিকশাচালক মহর আলী সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন,’আমারে যদি সরকারিভাবে কোন সহযোগীতা করে একটা পুঁজির ব্যবস্থা করে দেয় সরকার তাইলে আমি একটা ব্যবসা লইয়া বাইতাম।রিকশা চালাইতে কষ্ট হয়।একটা ছোটখাটো ব্যবসা দিতে পারলে ভাল হইতো।’
মহর আলীর রিকশার যাত্রী ছিলেন জামিল।তিনি বলেন, ‘রিকশাওয়ালা চাচার অনেক বয়স হয়েছে। আসলে তাকে দেখলে অনেক মায়া লাগে। তাই উনাকে ১০ টাকা ভাড়া বেশি দিলাম।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাসেল বলেন, ‘যারা ৬৫ এর উপর বয়স তাদেরকে আমরা সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেই।আর যারা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন তারপরেও সংসার চালাতে রিকশা চালান তাদের জন্য আলাদাভাবে কোন প্ল্যান নেই। তবে আবেদন করে রাখলে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ এলে সেখান থেকে তাদের দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’
Leave a Reply