কিশোরগঞ্জের নিকলীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ আবু জাফর খাঁনের পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িছাড়া। সন্ত্রাসীরা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছে । সন্ত্রাসীদের এহেন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী শহীদ পরিবার।
সোমবার, ৬ মে, সকাল ১১ টায় জেলা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী শহিদ পরিবার। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহীদ আবু জাফর খাঁনের সন্তান সিরাজুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন,১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে আমার পিতা আবু জাফর খাঁন শহিদ হন। পিতার মৃত্যুর সময় উনার নামে অনেক সম্পত্তি রেখে যান। বাবার মৃত্যুর পর আমার মা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। আমার বাবার মৃত্যুর দুই মাসের মাথায় আমার গর্ভধারিণী মা ও আমার ছোট দুটি ভাই ও বোনদের রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।পরবর্তীতে দীর্ঘদিন বোনদের বাড়িতে থেকে বড় হয়ে আমি ঢাকায় একটি চাকুরীতে যোগদান করি। ছোট ভাই জুবরাজ খানকে সকলের সহযোগীতায় প্রবাসে পাঠিয়ে দেই।
অনেক দিনপর জুবরাজ দেশে ফিরলে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই বাবার ভিটে মাটিতে একটি ঘর তৈরি করার। সেই সুবাদে আমার চাচাতো ভাই বাবু, পলাশসহ তার ভাইদের কাছে ঘর তৈরীর কথা বলার পর তাঁরা বিরুপ আচরণ করতে শুরু করে।পরবর্তীতে আমরা সালিসের আবেদন করলে নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকী আমান খানের সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান,ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আশেপাশের কয়েক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সালিশ হয় এবং সবগুলো সালিশে দলিলাদি দেখে বিচারকরা আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন।আমাদের চাচাতো ভাই বাবু ও তার ভাইয়েরা সালিশ থেকে লিখিতভাবে রায় মেনে গেলেও পরবর্তীতে তারা আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয় না বরং আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দেয়।
সর্বশেষ তাদের করা একটি মামলায় বিজ্ঞ আদালতের প্রতিনিধি সরজমিনে এসে এলাকায় তদন্ত করে এই সম্পত্তি আমাদের দখলভুক্ত সম্পত্তি বলে আদেশ প্রদান করে।
আদালতের এই আদেশের ধারাবাহিকতাই পরবর্তীতে আমাদের জায়গায় বসতঘর নির্মাণ করি।এরপর আমরা কিশোরগঞ্জ চলে আসার পর গত ২৫ এপ্রিল রাতে সন্ত্রাসী বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসীদের নিয়ে রাতের আঁধারে আমাদের ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, এমন খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত আমরা সেখানে গিয়ে দেখি সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তখন এবং আমাদেরকে দেখে বাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমাদের হত্যা করবে বলে হুমকি দিতে থাকে, তখন আমরা প্রাণের ভয়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে যাই। এখন তারা আমাদেরকে নিকলী ও তার আশেপাশে যেকোনো স্থানে পাওয়া মাত্রই খুন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
সালিশের সময় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ শত শত মানুষের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ রায় আমাদের পক্ষে আসার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে এখন কারপাশা ইউপি চেয়ারম্যান তাকি আমান খাঁনসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সন্ত্রাসী বাবু ও পায়েল গংরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ দিয়ে তাদের সমাজে ছোট করার জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।
সন্ত্রাসী বাবু ও পায়েল গংয়ের সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু জাফর খাঁনের সন্তান সিরাজুল ইসলাম খাঁন,শামসুন্নাহার খানম,আনোয়ারা খানম,রেখা খানম,শাহানা খানম ও জুবরাজ খাঁন সহ পরিবারের সদস্যরা।
Leave a Reply