কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ওরফে সুমন মোল্লাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
রবিবার, ২৩ জুন দুপুরে মামলাটি দায়ের করেন মিতু আক্তার নামের এক নারী। মিতু আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর গ্রামের মো. কামরুল হাসান মিলনের মেয়ে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮ এর (১) (২) (৩) (৪) (৫) ধারায় মামলাটি কিশোরগঞ্জ ১ নং আমলি আদালতে দায়ের করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার মৃত মো. আশরাফ উদ্দিনের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন (৩০) , বয়লা তারাপাশা এলাকার মো. তাজুল ইসলামের ছেলে মো. নাজমুল হোসেন হিরা (২৮) ও একই এলাকার মৃত আশরাফ উদ্দিনের ছেলে মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুল (৪৩)। এর মধ্যে মোল্লা সুমন ও মোল্লা বাবুল সম্পর্কে সহোদর ভাই ও হিরা তাদের আপন ভাগিনা।
মামলার আর্জিতে ভূক্তভোগি মিতু আক্তার বলেন, আমি কিশোরগঞ্জ সরকারী কলেজের বোটানি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বিভাগের একজন ছাত্রী। ২০২২ সালে সাউথ কোরিয়া প্রবাসী সাইফুলের সাথে আমার বিয়ে হয়। পরে একমাস সংসার করার পর সাইফুলের সাথেআমার বনিবনা না হওয়ায় ও সাইফুল নেশাগ্রস্থ হওয়ায় আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার বাবার বাড়ি চলে আসি।
পরে বাবার বাড়ি থাকাবস্থায় পড়াশোনাকালীন সময়ে কলেজে যাওয়া আসার রাস্তায় ২ নং আসামির ভাগিনা হিরা মোটরসাইকেল নিয়ে আমার গতিরোধ করে আমাকে বিরক্ত করতো ও প্রেম নিবেদন করতো।
এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর ১ নং আসামি (হিরা) আমাকে হুমকিদিয়ে বলে, আমার মামা (মোল্লা সুমন) ক্ষমতাসীন দলের নেতা। আমার সাথে প্রেম না করলে কলেজে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিব।
এক পর্যায়ে ১ নং আসামি (হিরা)’র সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। হিরা আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে এবং এবং হিরা এসবের স্থির ও ভিডিও ধারন করে রাখে।
এভাবে অনেক দিন চলার পর বিষয়টি আমি ২ ও ৩ নং আসামি (মোল্লা সুমন ও মোল্লা বাবুল) কে ফোনে জানানোর পর মোল্লা সুমন আমাকে বলে “ তুমি জান তুমি কার সাথে কথা বলছো? আমি ক্ষমতাসীন দলের নেতা। আমারভাগিনার সাথে বাড়াবাড়ি করলে কিশোরগঞ্জে থাকতে পারবেনা।” ৩ নং আসামি মোল্লা বাবুল বলে “ আমি বৌলাইয়ের চেয়ারম্যান, তুমি বাড়াবাড়ি করোনা।”
আর্জিতে ভূক্তভোগি মিতু আক্তর আরো বলেন, এভাবে ভয়ভীতির মধ্যে আরো কিছুদিন চলতে থাকে। হিরা নিয়মিত আমার সাথে শারীরিক মেলামেশা চালাতে থাকে।
এমতাবস্থায় হিরাকে আমি বিয়ের জন্য চাপ দিলে হিরা জনৈক সিরাজ কাজির মাধ্যমে গত বছরের ৮ জুন রেজিস্ট্রি করে আমাকে বিয়ে করে। কিন্ত আমাকে কাবিনের কোন কপি দেয় নাই। কাবিনের কপি চাইলে হিরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে আমি জানতে পারি হিরা বিবাহিত। আমি তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি তাদের দুইটি বাচ্চা হয়েছিল এবং পরে তারা মারা যায়।
এরপর থেকে হিরা আমার বাসায় একেকদিন একেক মেয়েকে নিয়ে এসে ভোগ করতে থাকে। এসব দেখে আমি অসন্তুষ্ঠ হয়ে তাকে তালাক দিয়ে দূরে সরে গেলে হিরা আমার নগ্ন ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর থেকে হিরা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি মানসম্মানের ভয়ে হিরাকে দুইবারে ৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হই।
আমার দেয়া টাকা দিয়ে হিরা তার বর্তমানে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কিনে।
পরে ২ নং আসামি (সুমন মোল্লা) আমার নগ্ন ভিডিওটি সামাকি যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে একটি I Phone 1.2 max ও একটি Samsung Galaxy Note 20 Hra আদায় করে।
এরপরও ২ নং আসামি (সুমন মোল্লা) আমার নগ্ন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিতে সহযোগিতা করে। এরপর ৩ নং আসামি (বাবুল মোল্লা) আমাকে ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে একটি পালসার মোটরসাইকেল কিনে। এইভাবে তিন আসামি আমার নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দেয়।
মিতু আক্তার মামলার আর্জিতে আরো উল্লেখ করেন, ১ নং আসামি (হিরা) গত রমজান ঈদের পর ১৯ এপ্রিল/ ২৪ তারিখে সর্বশেষ আমার সাথে মেলামেশা করে আবার আমার নগ্ন ভিডিও ধারন করে। আসামিরা ক্ষমতাবান হওয়ায় আমি তাদের কাছে হার মেনে তাদের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করায় আসামিগণ তাদের কাছে থাকা আমার নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে দেয়। বর্তমানে মান সম্মান নিয়ে বাঁচা আমার দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় চিনি আনার ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরপর পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হওয়ায় মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলাটি এফ আই আর করতে কিশোরগঞ্জ সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এ বিষয়ে জানতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে এখনো আমি কিছু জানিনা।
Leave a Reply