1. admin@bdchannel4.com : 𝐁𝐃 𝐂𝐡𝐚𝐧𝐧𝐞𝐥 𝟒 :
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

যাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক

রাজন কুমার দেবনাথ, কর আইনজীবী (আয়কর ও ভ্যাট)
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪
  • ৬২৪ বার পড়া হয়েছে
রাজন কুমার দেবনাথ, কর আইনজীবী (আয়কর ও ভ্যাট)

২০২৩-২০২৪ করবর্ষ থেকে একজন সম্মানিত পুরুষ করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয় এবং সম্মানিত মহিলা করদাতার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ টাকা হয়, তাহলে তাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। রিটার্ন  হচ্ছে আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট একজন সম্মানিত করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে আয়কর আইন ও হিসাববিজ্ঞানের রীতিনীতির ভিত্তিতে জমাদানকৃত ফরম।

আয়কর রিটার্ন সঠিক সময়ে জমা না দিলে একজন সম্মানিত করদাতা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। একটা বিশেষ ব্যাপার হলো; রিটার্ন জমা দিলেই যে আপনাকে কর দিতে হবে এমন নয়। রিটার্ন হচ্ছে বাধ্যবাধকতা। আর আপনার আয়কর প্রদান করতে হবে কি-না তা নির্ভর করে আপনার আয়ের সীমার উপর।

রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে-

১. আপনি যদি ২০ লক্ষাধিক টাকার ঋণ গ্রহণ করতে চান। ২. কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হতে চান। ৩. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি ও বজায় রাখতে । ৪.সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে। ৫. সমবায় সমিতির নিবন্ধন করতে। 

৬. সাধারণ বীমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে; ৭. সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০  লক্ষাধিক টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে; ৮. ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তি ও ধারাবাহিক রাখতে ;

৯. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসাবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসাবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও ধরে রাখতে;

১০. Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974 (Act No. LII of 1974) এর অধীন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৪০ নং আইন) এর অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও Special Marriage Act, 1872 (Act No. III of 1872) এর অধীন রেজিস্ট্রার হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তি বা লাইসেন্স ধরে রাখতে ।

১১.      ট্রেডবডি বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও ধরে রাখতে।  ১২. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে; ১৩. যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি এবং বহাল রাখতে;

১৪.      লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, কার্গো ও ডাম্ব বার্জসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে; ১৫. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ইট উৎপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে; ১৬. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে;

১৭. সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি বা বহাল রাখতে; ১৮. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে; ১৯. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে; ২০. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়; ২১. ৫(পাঁচ) লক্ষাধিক টাকার পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায় ২২. ১০ (দশ) লক্ষাধিক টাকার মেয়াদী আমানত খোলায় ও বহাল রাখতে

২৩. ৫  লক্ষাধিক টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে; ২৪. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে; ২৫. মোটরযান, স্পেস বা স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করতে; ২৬. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে;

২৭. গণকর্মচারীর বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে; ২৮. মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে; ২৯. অ্যাডভাইজরি বা কন্সান্টেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তা সরবরাহ সেবা বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোনো কোম্পানি থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে;

৩০. Monthly Payment Orderবা এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে সরকারের নিকট হতে মাসিক ১৬ (ষোল) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে কোনো অর্থপ্রাপ্তিতে; ৩১. বীমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে;

৩২. দ্বি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত অনান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে; ৩৩. এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি হইতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড় করতে;

৩৪.  বাংলাদেশে অবস্থিত ভোক্তাদের নিকট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করিয়া পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে; ৩৫. কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এবং Societies Registration Act, 1860 (Act No. XXIএর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনের ক্ষেত্রে;

৩৬.    পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দ্যেশে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস্ দাখিলকালে ৩৭. কোনো কোম্পানি বা ফার্ম কর্তৃক কোনো প্রকার পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে

৩৮. পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দ্যেশে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে; ৩৯.      রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা, সময় সময়, সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমোদনের নিমিত্ত ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে;

৪০.     স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসাবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে এবং বহাল রাখিতে;

৪১. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রডিট অরগানাইজেশন, সোসাইটি এবং সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে এবং চালু রাখিতে; ৪২. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে বাড়ির মালিকের; ৪৩. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর।

“রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ” বলতে বুঝাবে-

(ক) রিটার্ন দাখিলের প্রত্যয়ন বা প্রাপ্তি স্বীকার পত্র; (খ) করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড সার্টিফিকেট; বা (গ) করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত উপকর কমিশনার কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন।

রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার জন্য উপ কর কমিশনার অন্যূন ১ হাজার টাকা সেই সাথে ২৪ মাস প্রদেয় করের উপর বিলম্ব সুদ ৪% হারে আরোপ করতে পারেন। বর্তমান করবর্ষে (২০২৪-২০২৫) এই হার কমিয়ে ২% করা হয়েছে।  তাছাড়া রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শনের বিধান রয়েছে। অপারগতায়; উপ কর কমিশনার অন্যূন্য ৫ হাজার টাকা এবং অনধিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারবেন ।

বর্তমানে আয়কর রিটার্ন প্রদর্শন ছাড়া উপরের খাতসমূহ হতে সেবা গ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব। সময়মত রিটার্ন দিন এবং জরিমানা এড়িয়ে চলুন। আয়কর ও ভ্যাট আইন সম্পর্কে জানুন । সচেতন হোন, দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং