কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর শরীরে সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে অমানুষিক এই নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের বড়িগাতী গ্রামে। অভিযুক্ত স্বামী হিমেল মিয়া একই গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে।
বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত রাতে নির্যাতিতা লামিয়া আকতারের বাবা আবদুল জব্বার তাড়াইল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাড়াইল থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের বড়িগাতী গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে হিমেল মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে লামিয়া আকতারের বিয়ে হয়। বিয়ের ১/২ মাস পর থেকেই হিমেল মিয়া যৌতুক হিসেবে চাপ সৃষ্টি করে স্ত্রী লামিয়ার পরিবার থেকে পর্যায়ক্রমে দুই লাখ টাকা নেন। টাকা পেয়েও কিছুদিন পর আবারও তিন লাখ টাকা আনার জন্য স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করেন। স্ত্রী টাকা দিতে না পারায় লামিয়ার শ্বশুর আসাদ মিয়া, শ্বাশুরী সাফিয়া আকতার, স্বামীর বড় ভাই সোহেল মিয়া, তার বউ শেফালী আকতার, স্বামীর মামা আমিনুল ইসলাম সুজন মিয়া দিনের পর দিন তার ওপর মানষিক ও শারীরিক অত্যাচার করতে থাকে। টাকা না পেয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে স্ত্রীর উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন হিমেল। মারধরের এক পর্যায়ে হাতের সিগারেটের আগুনের স্ত্রী লামিয়ার ডান উরুর বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়। এসময় লামিয়া আহত হয়ে মাটিতে লুটে পড়লে শাশুড়ী সাফিয়া আকতার গলায় চাপদিয়া শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। তখন লামিয়া ধস্থাধস্থি করে প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঘরের বাহিরে বের হতে চাইলে স্বামীর বড় ভাই সোহেল মিয়া তাকে শ্লীলতাহানি করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে এলাকার পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়।খবর পেয়ে লামিয়ার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ীতে নিয়ে যায়।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, হিমেল মিয়া জুয়া ও নেশায় আসক্ত। লামিয়ার বাবা আবদুল জব্বার বলেন, মেয়ে সুখে ঘর করবে বলে বিয়ে দিলাম। কিন্তু সুখ হলো না। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন সইতে হচ্ছে তাকে। মেয়েকে স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আরও তিন লাখ টাকা চাইতেছে। আমি কীভাবে দেব এত টাকা? টাকার জন্য আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলার অবস্থায় নিয়ে গেছে।
ভূক্তভোগি লামিয়া আকতার বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমি স্বামীর নির্যাতন সইছি। তিনি যেভাবে বলেছিলেন আমি সেইভাবে চলার চেষ্টা করেছি। তারপরও প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। গত কিছুদিন আগে আমার শরীরের ডান উরুর বিভিন্ন অংশে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বামীর পরিবারের সকল সদস্যের যোগসাজশে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। আমি এর বিচার চাই।
উপজেলার রাউতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন তারিক জানান, বড়িগাতী গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে হিমেল মিয়া বিবাহের পর থেকেই দিগদাইড় ইউনিয়নের কল্লা গ্রামের আবদুল জব্বারের মেয়ে লামিয়াকে যৌতুকের জন্য মারপিট করে। আমরা তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছি। কিন্তু সে উশৃংখল, জুয়া ও নেশায় সারাক্ষণ নিজেকে ব্যস্ত রাখে। তিনি আরও বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতনের যে বিষয়টি সামনে এসেছে এটি পুরোপুরি সত্য। কতটুকু অমানুষ ও নির্দয় হলে সিগারেটের আগুনে একজন আরেকজনকে ছ্যাঁকা দিতে পারে। তার কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ। আমরা চাই তার সঠিক বিচার হোক।
এ ব্যাপারে তাড়াইল থানার ওসি মানসুর আলী আরিফ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে এমন একটি লিখিত অভিযোগের কপি হাতে পেয়েছি। অভিযোগের কপি পাওয়া মাত্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এসআই রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply