ময়মনসিংহে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও মায়ের ডাকের উদ্যোগে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নগরীর সি.কে ঘোষ রোডে র্যালি শেষে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকার ময়মনসিংহ নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় র্যালি ও মানববন্ধনে গুমের শিকার ব্যাক্তিদের পরিবারের সদস্য,আইনজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল হক বলেন, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গুমকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত ও দীর্ঘায়িত করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতালম্বী ব্যক্তিদের গুম করেছে । বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেন শীঘ্রই গুমের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমনটি দাবি করেন তিনি।
ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেভাবে গুম-খুনের রাজ্য তৈরি করেছিল ঠিক সেভাবেই তার পতন হয়েছে। এখন শুধু বিচার দেখার অপেক্ষা।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোরনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এটিএম মাহবুব-উল-আলম বলেন,২০০৯ সাল থেকে দেশে গুম হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর আগে ও পরে অনেক গুমের ঘটনা ঘটে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা এর শিকার হন। মায়ের ডাক এবং অধিকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিসহ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে এবং এই কারণে অধিকার এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম চৌধুরী, সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল, সাজ্জাতুল ইসলাম, সাংবাদিক মনির হোসেন, মানবাধিকার কর্মী মো. গোলাম সারোয়ার, আমিনুল ইসলাম, মুকিমুজ্জামান তালুকদার, আব্দুল গাফফার, দেলায়ার হোসেন রাজীব, বাকিউল ইসলামসহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে মুক্তাগাছার কৃষক রাশেদকে ১৮ দিন গুম করে রাখার পর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক দেখানোর ঘটনায় রাশেদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৭০৯ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর পরই গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা ‘আয়নাঘর’ ঘেরাও করেছেন এবং আয়নাঘরসহ বিভিন্ন অবৈধ বন্দিশালাগুলোতে (ডিটেনশেন সেন্টার) আটক ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে অন্তর্বর্তীসরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
Leave a Reply