কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাবেদ পাঠানের বিরুদ্ধে। তিনি মসজিদ, মন্দির ও কাবিখা, কাবিটা,ইজিপিপির প্রায় ১কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) ননওয়েজ কস্ট প্রকল্প বক্স কালর্ভাট নির্মাণ বাবদ বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬ শত ৯৭ টাকা উত্তোলণ করলেও উপজেলার যেসব স্থানে তা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল সরেজমিনে সেসকল স্থান ঘুরে কোনো প্রকল্প চোখে পড়েনি। ননওয়েজ কস্ট প্রকল্পে বক্স কালভার্ট নির্মাণের নির্ধারিত স্থানগুলোর মধ্যে ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের সুভাদ্রাপুর গ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে মোহনলাল বাবুর জমি পর্যন্ত রাস্তায় হরকুমার দাসের জমির নিকট ১টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বড়িবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচখানিয়া বাজারের পশ্চিম পাশ হতে রবিদয়ার খেলার মাঠ পর্যন্ত রাস্তায় বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫শত টাকা , জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের মুদিরগাঁও শান্ত মিয়ার বাড়ি হতে দাড়িচুরা পর্যন্ত রাস্তায় মসজিদের জমির নিকট বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রায়টুটি ইউনিয়নের রাজী গ্রামের পাকা রাস্তার শেষ মাথা হতে বড় কলুমা খাল পর্যন্ত আক্কাস ভূইয়ার জমির নিকট বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬ শ’ ৯৭ টাকা,মৃগা ইউনিয়নের ভাটি রাজিবপুর আগুন কালির বাধ হতে আবুল বাশারের জমি পর্যন্ত বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এলংজুরী ইউনিয়নের স্বল্পহাতকবিলা কাইরা হাওরের দানা মিয়ার জমি হতে শহর আলীর জমি পর্যন্ত দানা মিয়ার জমিতে বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাদলা ইউনিয়নের থানেশ্বর ৬নং ওয়ার্ডের নয়াবাড়ি হতে বড়হাটি পর্যন্ত রাস্তায় উপজেলা চেয়ারম্যানের জমির নিকট বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, চৌগাংগা চন্দপুর ইসলামের বাড়ি হতে সিংগুয়া বিল পর্যন্ত রাস্তায় আব্দুল হামিদের জমির নিকট বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শ’ টাকা এবং ইটনা সরকারির কাড়ার মতিন মিয়ার জমি থেকে কাজল মিয়ার জমি পর্যন্ত মাটির রাস্তায় মহিজ উদ্দিন জমির নিকট বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শ’ টাকার মোট ৯ টি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কথা থাকলেও তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) এর ৪০ দিনের কর্মসূচির ১ হাজার ৮শ ৭১জন লেবারের নামে নামের তালিকা করে নিজেদের সিম রেজিস্ট্রেশন করে এক্সভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়ে ২কোটি ৪৬লাখ ৯৭ হাজার ২শ’ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা): ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের ধনপুর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া থেকে ধনপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো কাজ করা হয়নি বলে জানান প্রকল্পের সভাপতি সনজিত দাস। এছাড়া ধনপুর,মৃগা,বড়িবাড়ি,রায়টুটি,বাদলা,এলংজুরী,জয়সিদ্ধি,চৌগাংগা ও ইটনা ইউনিয়নের ১৯টি প্রকল্পের রাস্তা মেরামত ও মাটি ভরাট বাবদ বরাদ্দকৃত আরও ২৯ লাখ ২৭ হাজার টাকার নামমাত্র কাজ করিয়ে টাকা উত্তোলনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা (গম): ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের মাটির রাস্তা সংস্কার, মাটি ভরাট ও পূর্ণনির্মাণ বাবদ ৩৪.৭০৭টন গম ৯টি ইউনিয়নের ১০টি প্রকল্পের বরাদ্দ পেয়েও কোনো কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে।
গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর): উপজেলা পরিষদ ভিত্তিক ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ের কচুয়াহাটি মক্তব উন্নয়ন বাবদ ৫২ হাজার টাকার মধ্যে ৫০% টাকা দিয়ে বাকিটা নিজেই আত্মসাত করেছেন বলে জানিয়েছে মসজিদ কমিটি ।এছাড়া চরপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন বাবদ ১০ হাজার টাকা, সহিলা পুনারহাটি জামে মসজিদ উন্নয়ন বাবদ ১০হাজার টাকা, নয়ানগর কমস্থান উন্নয়ন বাবদ ১৫ হাজার,যোগীরকান্দা জামে মসজিদ উন্নয়ন বাবদ ৫ হাজার টাকা ও বড়িবাড়ি ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু পরিষদ উন্নয়নের নামে ৮৮ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসবাপত্র ক্রয় খাতে বরাদ্দকৃত ১লাখ ৫০ হাজার টাকায় শুধুমাত্র একটি টেবিলের জন্য ৩ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ফুট প্রস্থের একটি গ্লাস কেনা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করলে মুখস্ত বক্তব্যে বলেন, ‘বাজেট অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। তবে এসব বিষয়ে আপনারা পিআইও এর সাথে কথা বলেন। উনি আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।’
এ বিষয়ে ইটনা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাবেদ পাঠানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপজেলায় বরাদ্দকৃত সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে ইজিপিপি ৪০ দিনের কাজটা আমরা ভেকু মেশিন দিয়ে করিয়েছি। কারণ তখন চারশত টাকা মুজুরি দিয়ে কোনো লেবার পাওয়া যায়নি। ওই সময় সবকিছুই সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছেলে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকের ইশারায় হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি এতকিছু আমার জানা নেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply