ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারী নজরুল কলেজের অরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব বেখা ও তার স্বামী প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঢালাও মিথ্যা, ভিত্তিহীন, ও কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশ করায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সরকারী নজরুল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা জানান, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা একজন সৎ, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল প্রশাসক। ব্যক্তি জীবনে তিনি ও তার স্বামী সমাজে মানবিক মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদগুলো মিথ্যা, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করছি।
সরেজমিন গিয়ে সরকারী নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা একজন সৎ দক্ষ এবং দায়িত্বশীন প্রশাসক হিসেবে সচেতন। কলেজের উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সব সময় কাজ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে না পেরে একজন সহকারী অধ্যাপক তার অনুসারীদের নিয়ে একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছেন বলে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওর মাধ্যমে তা স্পষ্ট করেছেন সংশ্লিষ্ট ওই সাংবাদিক। ফলে প্রমাণিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পরিবেশন করা সংবাদগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।
কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারী নজরুল কলেজটি ত্রিশাল পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা-ময়মনসিংহ ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। কলেজ এলাকাটি জনবহুল ও বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় কলেজের পূর্ব সীমানা ঘেষে একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়।যেখানে একাট কাঁচা বাজার যা কলেজ মার্কেট নামে পরিচিত। যেখানে ব্যাংক, রেস্টুরেন্টসহ বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি ২০১৩ সালে নির্মাণ করে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। কলেজ মার্কেট থেকে প্রাপ্ত আয় কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। পরবর্তীতে যা কলেজের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
কলেজ জাতীয়করণ/সরকারী করণের পর কলেজের যাবতীয় আয়-ব্যয় হিসেব করে সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে। কলেজটি সরকারীকরণের পর প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হন ফয়জুর রহমান। তার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় কলেজের শিক্ষক জয়নব রেখা যেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না হন এবং অপারগতা প্রকাশ করেন সে জন্য চাপ সৃষ্টি করেন আরেকজন সহকারী অধ্যাপক।
সকল চাপ ও প্রভাব উপেক্ষা করে গত ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন জয়নব রেখা। দায়িত্ব নেওয়ার পর কলেজের পড়ালেখার মান উন্নয়ন, কলেজের শৃংখলা ও নিরাপত্তার ব্যাপাক অবদান রাখেন তিনি। সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা। ঠিক ওই সময় কলেজের ওই সহকারী অধ্যাপক বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, ভুয়া ও ভিত্তিহীন তথ্যসহ একজন সাংবাদিককে দিয়ে দিনের পর দিন মিথ্যা, কাম্পনিক সংবাদ ও ফেইসবুকে ভুয়া আইডি দিয়ে অপপ্রচার শুরু করে কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন করে চলেছেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত জয়নব রেখা জানান, আমি অত্যন্ত সততার সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। ১৯৯৪ সাল থেকে জীব বিজ্ঞানের একজন প্রভাষক হিসেবে এই কলেজে কর্মজীবন শুরু করি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২৩ সাল থেকে দায়িত্ব পেয়েছি। এরপর থেকে কলেজে নিয়মিত ক্লাশ, পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে চলছে পড়ালেখার মান উন্নয়ন হয়েছে।তা তে সরকারি হিসেবের চেয়ে একটি টাকাও বেশী নেয়ার নজির নেই। এটি এখন আদর্শ কলেজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কলেজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলা হয় যার কোন ভিত্তি বা প্রমাণ নেই। সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করতে একটি মহল চক্রান্ত করছে। তারা আমাকে ও আমার স্বামীকে নিয়ে কাল্পনিক গল্প বানিয়ে অপপ্রচার করেছে। আমি কলেজের সৌন্দর্য বর্ধন করেছি। আমি কখনও কলেজের একটি টাকাও অপচয় করিনি । অসৎ উপায়ে আমার কোন আয় নেই। আমার স্বামী একজন অত্যন্ত সৎ ও মানবিক মানুষ। তিনি এক সময় সিভিল সার্জন ও উপ- পরিচালক ছিলেন। সারা জীবন তিনি মানুষের সেবা করেছেন। সমাজে আমাদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আমাদের দুজনের সারা জীবনের আয় ও বাবার সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ময়মনসিংহ শহর থেকে দূরে একটি বাড়ী করেছি। তাও আবার ১৪ বছরে ধাপে ধাপে। এটা নিয়ে সম্মানে আঘাত না করা হয় জয়নব রেখার স্বামী সাবেক সিভিল সার্জন, সাবেক উপ পরিচালক মো. মাহবুবুল হক জানান, ১৯৮৩ সালে আমি এমবিবিএস পাশ করি এবং ১৯৮৪ সাল থেকে চিকিৎসক হিসেবে আমার কর্ম জীবন শুরু করি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমার কর্মজীবনে আমি মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট, লেকচারার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ও সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উপ-পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করি। দীর্ঘ কর্মজীবনে আমি কখনও অর্নৈতিকভাবে একটি পয়সাও আয় করিনি। অত্যন্ত সৎ ও আদর্শিক জীবন যাপন করেছি। সে জন্য কর্মজীবনে কোথাও আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আমি ১৯৯৭ সালে ময়মনসিংহ পৌরসভার বাইরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ২২ শতাংশ নিচু জমি ক্রয় করি। তিন ধাপে মোট ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায়।
২০০৭ সালে আমি বাড়ির কাজ শুরু করি। ধাপে ধাপে ১৪ বছরে ৬ তলা বাড়ীর কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে আমি আমার জীবনের যাবতীয় সঞ্চয়, বাবার প্রাপ্ত সম্পতি, আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ী থেকে প্রায় সম্পত্তি ও আমার যাবতীয় সম্পদ বিক্রি করেছি এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ পর্যন্ত নিয়েছি। সর্বশেষ আমার পেনশনের টাকাগুলোও বাসা নির্মাণে ব্যয় করেছি। আমার বিরুদ্ধে এভাবে দিনের পর দিন মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে আমার পরিবার ও আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। শুধু পত্রিকায় নয় ফেসবুকে অপরিচিত/ফেইক আইডি থেকে মিথ্যা বানোয়াট কাল্পনিক কথা লেখা হয়েছে যা অত্যন্ত আপত্তিকর। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দিনো পর দিন এভাবে আমাকে হেয় করায় আমি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছি।
নজরুল কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ও স্টাফ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, অধ্যক্ষ ম্যাডাম অত্যন্ত সৎ, বিনয়ী। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন দুই বছর পার হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কলেজের পড়ালেখার মান উন্নত হয়েছে। কলেজের পরিবেশ উন্নত পরিচ্ছন্ন হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সবাই উনার উপর আস্থাশীল। উনার বিরুদ্ধে অভিযোগুলো মিথ্যা, ও ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে আমাকে বলা হয়েছে আমি কলেজ মার্কেট থেকে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছি। কলেজ মার্কেটসহ কলেজের যাবতীয় আয় সরকারী কোষাগারে জমা হয়। এখানে আত্মসাৎ করার কোন সুযোগ নেই।
কলেজের জেষ্ঠ প্রভাষক ইশরাত জাহান জানান, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা সং, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল প্রশাসক। তিনি কখনও কোন বিষয় নিয়ে অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ব্যাক্তি জীবনে তিনি ও তার স্বামী সমাজে মানবিক মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তাদের বিষয়ে প্রচারিত সংবাদগুলো, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ত্রিশাল উপজেল নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ জানান, আমি যতদূর জানি সরকারী নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ জয়নব রেখা একজন সৎ দক্ষ ভালো মানুষ। আমি যতদিন সভাপতি ছিলাম উনাকে অনিয়ম দুর্নীতি অপচয় করতে দেখিনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো শুনেছি। এ বিষয়ে সত্যতা পাইনি।
Leave a Reply