জ্যৈষ্ঠের শুরুতে কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই রসালো এ ফল কিনতে আগ্রহের কমতি নেই ক্রেতাদের। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় লিচু এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
লিচু ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর ফলন কমের পাশাপাশি আকারেও অপেক্ষাকৃত ছোট হয়েছে। এছাড়া ফেটে যাওয়াসহ পোড়া ক্ষত দেখা যাচ্ছে লিচুর গায়ে। এতে বড় প্রভাব পড়েছে বাজারে। এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে লিচু আসতে শুরু করেছে।গাজিপুরের কাপাসিয়া থেকে আসা এসব লিচু অপরিপক্ব ও আকারে ছোট। রাজশাহী বা দিনাজপুরের পরিপুষ্ট লিচু এখনো বাজারে পুরোপুরি আসেনি। এ দুই জেলার লিচুর জন্য ক্রেতাদের আরও এক দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। সাধারণত দিনাজপুরের লিচু স্বাদ ও মানে আলাদা। আর বাজারে আসার আগে বৃষ্টি পেলে এসব লিচু আকারে বড় এবং রঙ ও সুন্দর হবে। পাশাপাশি রসে ভরা থাকবে। সারা দেশেই এ লিচুর চাহিদা বেশি। বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে আছে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি ইত্যাদি।
সোমবার, ২০ মে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানা,কাচারিবাজার,বড়বাজারসহ শহরের কয়কেটি বাজার ঘুরে লিচু ক্রয়-বিক্রয়ের এমন তথ্য জানা যায়।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমদিকের হওয়ায় বাজারে লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়াও ফলন কম হওয়ায় গতবারের তুলনায় লিচুর দাম এবার দ্বিগুণ। গত জ্যৈষ্ঠের শুরুতে কিশোরগঞ্জে প্রতি একশো লিচু ২শ’ থেকে আড়াইশো টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেই লিচু কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায়।
পুরানথানার লিচু বিক্রেতা আজিজুল বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে লিচুর দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধি পওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাত পড়েছে। প্রতি একশো লিচু ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা দামে কেনা পড়ছে। যা ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ রেখে আমরা বিক্রি করছি।
লিচু কিনতে আসা মুবিনুর রহমান বলেন, বছর ঘুরলেই লিচুর দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এখানেও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি আছে।এরপরও একে তো মধু মাস তারমধ্যে লিচুর তুলনা তো অন্য কোনো ফল দিয়ে হয় না। তাই দাম দ্বিগুণ দিয়েই পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে লিচু ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন ১ শ লিচুতে সঠিক ১শ লিচু থাকে না। অনেক সময় ২০-৩০ টা লিচু কম থাকে।
প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।শহরের কাচারিবাজারে লিচু কিনতে আসা জামাল বলেন, গ্রামে যাচ্ছিলাম। এজন্য ভেবেছিলাম একশো লিচু নেবো। বিক্রেতা দাম চেয়েছেন সাড়ে তিনশো টাকা।একশ লিচুর জন্য এতটাকা খরচ করা সম্ভব নয়। তাই লিচু ছাড়াই যাচ্ছি।
ফলপট্টির সাগর ফল ভাণ্ডারের সাগর বলেন, জ্যৈষ্ঠর শুরুতে বাজারের যে লিচু এসেছে তা মোজাফফর জাতের। প্রতিদিন ভোরে বাগান মালিক ও চাষিরা আড়তে এসে নিলামে লিচু বিক্রি করেন। পাইকারী ব্যবসায়ীদের প্রতি হাজার লিচু আড়াই থেকে তিন হাজারে কিনতে হচ্ছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহী ও দিনাজপুরের পরিপুষ্ট রসালো লিচু পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
ফল ব্যবসায়ী আড়ৎতদাররা জানান, মৌসুমের শুরুর দিকে হওয়ায় লিচুর দাম কিছুটা বেশি। এখনও বাজারে সেইভাবে লিচু আসতে শুরু করেনি। এছাড়াও তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে ফলন কম হওয়ার প্রভাব বাজারে পড়েছে। তবে রাজশাহী ও দিনাজপুরের লিচু বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমবে।
কিশোরগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন,এটা কৃষি পণ্য। তাই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দাম বেশির বিষয়টি দেখবে। আর পরিমাণে কম দেয়ার বিষয়টি আমরা তদারকি করবো। যদি পরিমাণে কম দেয়া হয় আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
Leave a Reply