ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মল্লিকপুর লক্ষীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম ও সাবেক সভাপতি আবু বাহারুল আলম মজনুর বিরুদ্ধে নিয়োগের প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এরশাদের নামের এক ভূক্তভোগী।
জানা যায়, উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের মল্লিকপুর লক্ষীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিদাতা মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে এরশাদ মিয়াকে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেবে বলে প্রলোভন দেখায় তারা দু’জন। নিয়োগ পেতে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম ও সাবেক সভাপতি আবু বাহারুল আলম মজনু এরশাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। পরে কয়েক দফা আলোচনার পর সাড়ে ৩লাখ টাক দিতে রাজি হন এরশাদ। পরবর্তীতে বেকার এরশাদ মিয়া বাবার জমি দেওয়া বিদ্যালয়ে চাকুরি পাওয়ার আসায় নিজের ৩৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। টাকা নেওয়ার সময় তারা ৫ মাসের মধ্যে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী দেবে বলে আস্বস্ত করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এরশাদের চাকুরী না হওয়ায় তিনি আবারও তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এসময় তারা আরো কিছুদিন সময় নেন। সেই সময় পার হওয়ার পরও তারা আর এরশাদকে চাকুরী দেননি। এদিকে ভুক্তভোগী এরশাদ যখন বুঝতে পারে তারা চাকুরী দিবে না তখন এরশাদ তার টাকা ফেরত চায়। তখন সেই টাকা দিতে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা টাকা দিবেনা বলে জানিয়ে দেয় এবং এরশাদকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়টির নতুন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির কাছেও এরশাদ তার চাকুরীর বিষটির দাবি করেন। এসময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম ওই নতুন কমিটিকে সাথে নিয়ে অফিস সহকারী পদে চাকুরী দিবে বলে এরশাদকে আস্বস্ত করেন। কিন্তু সেই চাকুরীও এরশাদের কপালে জুটেনি। পরে ভূক্তভোগী এরশাদ তার টাকা ফেরত দিতে বলে। এসময় উল্টো তার ওপর শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও মানসিক নির্যাতন। তাদের এমন হুমকির ভয় পেয়ে টাকা উদ্ধারে পিছু হটেন এরশাদ।
এদিকে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এরশাদ মনে করে এখন উপজেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে তার টাকাগুলো উদ্ধার হবে এবং সেই সাথে উপযুক্ত বিচার পাবে। এমন চিন্তায় এরশাদ মিয়া গত বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সাথে অভিযোগটির অনুলিপি দেয়া হয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ থানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবে। সেই অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত নামেন ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।
এরশাদ মিয়া বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ এই বিদ্যালয়ের জমিদাতা। তাই আমি এই বিদ্যালয়ে চাকুরী করার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করি। পরে তারা দুজন আমাকে চাকুরী দিবে বলে টাকা দিতে বলে। তখন আমি আমার নিজের ৩৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়েছি। যে জমিটুকুর বর্তমান বাজার মূল্য ১৭ লাখ টাকা। তারা আমাকে আর চাকুরী দেননি তারা। পরে আমার টাকা ফেরত চাইলে তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়। তৎকালীন সভাপতি আবু বাহারুল আলম মজনু ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম চাকুরি দেওয়ার কথা বলে আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু বাহারুল আলম মজনুর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। যেকারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে মল্লিকপুর লক্ষীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম বলেন, অভিযোগকারী এরশাদ মিয়া আমার বাসায় গিয়েছিলো। পরে আমি তাকে আস্বস্ত করে বলেছি অন্যান্য দাতা সদস্যদের চাকুরী দেওয়া হয়েছে। তাই পদ খালি হলে তাকেও চাকুরী দেওয়া হবে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে অভিযোগের একটি অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply