কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. ফজলুল হকের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করা শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে ওই প্রধান শিক্ষককে সর্বোচ্চ সন্মান দিয়ে অফিসে বসিয়েছে।
সোমবার, ২১অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. ফজলুল হকের নিজ বাসায় গিয়ে সন্মানের সাথে তাকে বিদ্যালয়ের অফিসে এনে চেয়ারে বসান শিক্ষার্থীরা। এসময় নিজেদের ভুল স্বীকার করে তাদের প্রিয় শিক্ষকের হাত ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে ফুলের মালা পড়িয়ে ও ফুলের তোড়া দিয়ে সন্মানিত করেন তাদের স্যারকে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শিব্বির, সাইফ, নাহিদ ইসলাম, আরাফাত মিয়া, ফাহিম ও ওয়ালিদের নেতৃত্বে ওই প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. ফজলুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিলো। আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এতেই আমি সন্তুষ্ট। আমি তাদের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাদের দীর্ঘায়ূ কামনা করছি।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অভিযোগ এনে গত ২০ অগাস্ট মঙ্গলবার সকালে কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের ছাত্রগণসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সাথে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. ফজলুল হকের পদত্যাগের জন্য এক দফা “পদত্যাগ” দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তাদের একদফা দাবি পেশ করেন। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করায় গত ২১ অগাস্ট বুধবার এক প্রেস ব্রিফিং করে ওই প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ওইদিন প্রধান শিক্ষক শাহ্ মো. ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত কুলিয়ারচর আইডিয়াল এস.এইচ স্কুল অবরোধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে গত ২২ অগাস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি দল ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ ১ঘন্টা আলোচনা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরামর্শে লেখা পড়ার স্বার্থে ওইদিন দুপুরে ক্লাস বর্জন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। তবে ওই প্রধান শিক্ষক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে এমন সুযোগ দিলেও কোন ক্লাস নিতে পারবেনা এবং কোন দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবেনা এমন দাবি রেখে প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে তালা লাগানো থাকবে এমন সিদ্ধান্তে অটল ছিল শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য করার হিড়িক পড়েছিলো। শিক্ষকদের, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হেনস্তা, মারধর, এমনকি টেনে চেয়ার থেকে তুলে দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে। তবে ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ের কত শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে তার হিসাব নেই।
Leave a Reply