কিশোরগঞ্জে প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রোদ আর গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও যেন স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথ-ঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। তাপের তপ্ততায় ঘেমে যাচ্ছে শরীর। শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। এ অবস্থায় চরম পিপাসায় কাতর পথচারীরা কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন বরফগলা শরবত ও আখের রসে।
বুধবার, ২২ মে দুপুরে সরেজমিনে জেলা শহরের আখড়া বাজার ব্রিজ সংলগ্ন সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে গিয়ে দেখা যায়,আখের রস ও শরবত বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানের। জেলা শহরে অন্তত অর্ধশতাধিক অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান গড়ে উঠেছে। তীব্র গরমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ভিড় যেন লেগেই থাকে। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ফুটপাতে হাঁটলে কিছুক্ষণ পরপর ভ্যানে মিলছে লেবু,মালটা,ইসবগুল, তরমুজসহ নানা ফলের শরবত ও আখের রস। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তৃষ্ণা মেটাতে এসব শরবতের দোকানে ভিড় করছেন।
পুরানথানা এলাকার শরবত ব্যবসায়ী শান্ত বলেন, প্রখর রোদ আর গরমে বরফগলা পানিতে লেবুর শরবত বিক্রি করছি।বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০-৫০০ গ্লাস শরবত বিক্রি হচ্ছে।
আখড়াবাজার এলাকার আখের রস বিক্রেতা কামরুল বলেন, গরমে আখের রসের চাহিদা বেড়েছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন আবার প্লাস্টিকের বোতলে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এক গ্লাসের দাম ২০ টাকা। একশ গ্লাস রস বিক্রি করলে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা লাভ হয়। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড়শ গ্লাস রস বিক্রি হচ্ছে।
গৌরাঙ্গবাজার এলাকার অপর এক শরবত বিক্রেতা মনির বলেন,আমি এ এলাকায় অ্যালোভেরা, ইসবগুল, আঁখের গুড়সহ বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে সারাবছরই শরবত বিক্রি করি। গরমে শরবত বেশি বিক্রি হয়। বরফ দিযে সেগুলো ছোট ছোট টুকরো করে মিশিয়ে বড় কাঁচের পাত্রে ঠাণ্ডা করে রাখি। অতিরিক্ত গরমে বিক্রিও বেড়েছে।
রিকশা চালক রুবেল বলেন, গরমে গাড়ি চালিয়ে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে শরবত খাই। এতে শরীরটা বেশ ঠাণ্ডা লাগে। ভালো লাগে। এজন্য এখানে এসে দিনে প্রায় দুই তিন গ্লাস শরবত পান করি।
অটো রিকশাচালক আবুল মিয়া বলেন, পেটের দায়ে তীব্র গরমেও ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। গরমে সারাদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে শরবত খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছি। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষদের জন্য ১০-২০ টাকা দামের শরবত অনেক স্বস্তি দিচ্ছে।
শফিক নামে এক পথচারী বলেন, তীব্র গরমে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। এরপরও কাজের জন্য বের হতে হয়। একটু স্বস্তির জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকানে শরবত খাচ্ছি।
এব্যাপারে ডা.সালাহউদ্দিন মিঠু বলেন, অতিরিক্ত তাপদাহে ডায়রিয়া, পানি শূন্যতা, হিট স্টোকসহ অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচতে কিছুক্ষণ পর পর পানি বা শরবত পান করলে এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। দুপুরের রোদে বাইরে বের হলে ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। তা ছাড়া যারা শ্রমজীবী আছেন তারা ১৫-২০ মিনিট পর পর বিশ্রাম নিয়ে কাজ করতে হবে। তারপরেও যারা হিটস্ট্রোক সহ গরমের জন্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, হাওর অঞ্চল কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিন এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
Leave a Reply