ঈশ্বরগঞ্জে রাস্তা ও জলাধারার সংকটের কারণে ফায়ার ফাইটার কর্মীরা অগ্নিনির্বাপনে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের ৩শ ৪টি গ্রামে মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫শ ৯৮জন। এই জনবহুল উপজেলায় ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে দত্তপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। এই স্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় অগ্নিনির্বাপনে কাজ করে আসছে। ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র বলছে, উপজেলায় যতগুলো অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় সবগুলো নির্বাপন করা সম্ভব হয় না অপ্রশস্থ রাস্তা ও জলাধার সংকটের কারণে।
ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা থেকে গ্রামের ভেতরে লিংক রোড না থাকা এবং যেখানে আছে সেগুলো অতিশয় সরু হওয়ায় গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এমতাবস্থায় অগ্নিনির্বাপনে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনা দমকল কর্মীরা। অপরদিকে পানি সংকটের কারণে ও অগ্নিনির্বাপন মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হয়। ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে প্রথম কল পানিবাহী একটি গাড়ি রয়েছে। এ গাড়িতে মাত্র ৪৮শ লিটার পানি রিজার্ভ থাকে। বড় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে এ পানি একেবারেই অপ্রতুল। প্রথম কলে পানি শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় কল গাড়ি দিয়ে জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে অগ্নিনির্বাপন করা হয়। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সময় কাছাকাছি কোন নদী বা পুকুর না থাকায় পানির অভাবে দ্বিতীয় কল গাড়ি নিয়ে ফায়ার ফাইটারদের দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তরা দমকল কর্মীদের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে থাকেন। স্টেশন অফিসার বলেন, গ্রামে গভীর পুকুর নেই বললেই চলে। এমনও গ্রাম আছে যার আশপাশে কোন রকম জলাশয় নেই। সেই এলাকা গুলো সব সময় অগ্নি ঝুঁকিতে থাকে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত কাঁচা মাটিয়া নদীটি এককালে উপজেলা বাসীর জন্য ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। এ নদীতে সারা বছর ধরে থাকতো প্রচুর পানি। চৈত্রের খরতাপের সময় গ্রামে বেশি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকে। তখন এলাকাবাসী এই নদীর পানি দিয়েই অগ্নিনির্বাপন করত। বর্তমানে নদীটি নাব্যতা হারিয়ে ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে নদী পাড়ের জনবসতি, হাট বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্রের লোকজন সহজলভ্য পানির উৎস থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলে আগুন নির্বাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর, সোহাগী, আঠারবাড়ি, উচাখিলা, মধুপুর, খালবলা, লক্ষীগঞ্জ, মাইজবাগ, শাহগঞ্জ সহ সরকারি ডাকভুক্ত ৪১টি হাট বাজার রয়েছে। অধিকাংশ বাজারে নির্ভরযোগ্য কোনো পানির উৎস নেই।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কিছু সংখ্যক বাজারে অপ্রস্থ রাস্তার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছা সম্ভব হয় না। এ উপজেলায় এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারলেও তখন পানি সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।
সরেজমিন বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে আগের মত আর পুকুর জলাশয় নেই। গ্রামের মানুষ পুকুর ভরাট করে জলমটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে গ্রামীণ জনপদেও অগ্নিঝুকি বেড়ে গেছে।
এ ব্যাপারে সুশীল সমাজের সাথে কথা হলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন এর সাধারণ সম্পাদক নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার বলেন, অগ্নিনির্বাপনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে প্রথমত ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার স্টেশনকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করতে হবে। তাহলে গাড়ি ও জনবল বৃদ্ধি পাবে। এতে অগ্নিনির্বাপনের পথ সুগম হবে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজার ব্যবসা কেন্দ্র আমাদের কাঁচা মাটিয়া নদী অধ্যুষিত অঞ্চলকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। এই নদীটি যদি খনন করা যায় তবে বিশাল পানির উৎসের সৃষ্টি হবে। যা অগ্নিনির্বাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়াও সরকারি ভাবে উপজেলা সদরসহ বড় বড় হাট বাজারের মধ্যস্থলে যদি পানির টাওয়ার তৈরি করা যায় সেখান থেকে সহজে পানি ব্যবহার করে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সফল ভূমিকা রাখতে পারবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, অগ্নিনির্বাপনের সুবিধার্থে স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতা নিয়ে এবং জাতীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের সাথে কথা বলে কাঁচামাটিয়া নদী গ্রামীন জনপদে পুকুর খনন ও রাস্তা নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, কাঁচামাটিয়া নদীটি খননের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ে পুকুর খনন সহ রাস্তা ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। নদীর নাব্যতা ফিরে এলে অগ্নিনির্বাপনে পানির চাহিদা পূরণ হবে। তিনি আরো বলেন, ফায়ার স্টেশনে জনবল বৃদ্ধি সহ পানিবাহী গাড়ি ও সহায়ক যন্ত্রপাতির জন্য মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply