ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী দুর্গম এলাকা চর মাদাখালী গ্রাম। ওই এলাকার একাধিক চুরি, ডাকাতি, মাদক, সন্ত্রাস, খুনের মামলার আসামি মনির বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এখন নতুন করে এলাকায় মানুষের ত্রাস সৃষ্টি করছে সন্ত্রাসী মনিরসহ কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ।
জানা যায়, উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা চর মাদাখালী গ্রাম। নৌকা ছাড়া ওই এলাকায় যোগাযোগের আর কোন ব্যবস্থা নেই। তবে পার্শ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলার ১৪ কিলোমিটার ঘুরে সড়ক পথেও যাওয়া যায় ওই এলাকায়। ওই এলাকার ত্রাস মনির বাহিনী। তিনি চুরি, ডাকাতি, মাদক, জমি দখল কারবারের সাথে জড়িত। মনির ত্রিশাল ও নান্দাইল থানায় একাধিক মামলার আসামি। গ্রামবাসী গত এক বছর আগে মনির বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করেছে। এতে মনির পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তখন এলাকায় শান্তি বিরাজ করছিল। মনির জেল খেটে বের হয়ে আবারো গুণ্ডা বাহিনী তৈরী করে জমি দখল, মানুষের বাড়ি-ঘর দখল করে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। ওই এলাকায় মনির বাহিনীকে ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল কিশোর গ্যাং দিয়ে পেছন থেকে সার্পোট দিচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মনির কিশোর গ্যাংয়ের সাপোর্ট নিয়ে বর্তমানে ওই এলাকায় জমি, দোকান, বাড়ি-ঘর দখল মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দিয়েছেন এলাকবাসী।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ ওই এলাকার চর মাদাখালী নতুন চরে মকবুল মাকের্ট দখলে নেয় মনির বাহিনী। সে রাতের অন্ধকারে ২০-৩০ জন লোক নিয়ে তালা ভেঙে দখলে নেয়। ওই মার্কেটে থাকা শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের আসবাবপত্র ভাংচুর করে মনির বাহিনী তালা লাগিয়ে দেয়। তাছাড়া মকবুল হোসেনের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে দিয়েছে এমন অভিযোগ ত্রিশাল থানায় দেন মকবুল হোসেনের ছেলে শেখ মো. সানা উল্লাহ সোহাগ।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ মিয়া, হালিমা খাতুন, রেজিয়া আক্তার বলেন, সন্ত্রাসী মনিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। মনিরের কারণে রাতে ঠিকমত ঘুমানোও যায়না। তিনি এলাকার চুরিসহ মাদক ব্যবসা করেন। তাকে কেউ কিছু বললে তাকে তুলে নিয়ে মারধর করেন। পুলিশ কয়দিন পরপর তাকে ধরে নিয়ে গেলেও জেল খেটে তিনি আবার বের হয়ে আসেন। এখন তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে ধলা বাজারের প্রভাবশালী সামাল আকন্দের ছেলে ফাহাদ। ফাহাদ কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান তার প্রভাবেই মনিরের অত্যাচার আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তিনি জমি দখল, মানুষের বাড়ি দখল করছেন প্রতিনিয়তই। তিনি মকবুল মার্কেট রাতের অন্ধকারে গুণ্ডা বাহিনী নিয়ে দখল নিয়েছেন। মনিরের ত্রাসে এলাকায় কেউ মুখ খুলতেও চাননা। আমরা কার কাছে গেলে বিচার পাবো। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, মনিরের অত্যাচারে আমার এলাকার লোক খুবই অতিষ্ঠ। তিনি একাধিক মামলার আসামি। পুলিশ তাকে ধরে নিলেও কয়েকদিন জেল খেটে আবার বেড়িয়ে এসে তিনি আবার মানুষের উপর অত্যাচার করেন। এই এলাটি দুর্গম হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারছেনা। বর্তমানে মনিরের গ্যাং অনেক বড়। সে স্থানীয় প্রভাবশালী সামাল আকন্দ ও তার ছেলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান ফাহাদের নেতৃত্বে মানুষের জমি-বাড়ি দখল করছে। ফাহাদের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র, রড, চাপতি নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ এলে আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। আমাকে না মারতে পেরে সামালের ছেলে কিশোর গ্যাং প্রধান ফাহাদ আমার বাসায় দুই রাউন্ড গুলি করে। এ নিয়ে আমি ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কোন প্রতিকার পাইনি। আমাকে মারার উদ্দেশ্য হলো আমি চরমাদাখালীতে তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করি। আমি বাঁধা না দিয়ে মনির বাহিনীকে নিয়ে তারা মানুষের জমি বাড়িঘর দখল করতে পারবে। আমি তাদের সাথে পারছিনা। এই কিশোর গ্যাংয়ের সাপোর্ট হলো প্রভাবশালী সামাল আকন্দ । তার ছেলে ফাহাদ এই গ্যাংয়ের প্রধান তার সাথে রয়েছে খুনের মামলার আসামী সাব্বির, পল ও সন্ত্রাসী মনিরসহ দেড় দুইশ ছেলে পেলে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার নিরিহ এলাকবাসীকে এদের হাত থেকে বাচান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সামাল আকন্দের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চোর- ডাকাতের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। চোর-ডাকাত আমার শত্রু। সন্ত্রাসী মনিরের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমার ছেলে বা আমি কোন কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত নই। কিছু মানুষ এগুলো ছড়াচ্ছে। আমরা ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে কম যাওয়া হয়। ঐ এলাকায় কে প্রভাব বিস্তার করছে তা আমার জানা নাই। তবে অনেক বড় বড় লোক আছে ঐ এলাকায়। ইউপি সদস্য আনোয়ারের বাসায় আপনার ছেলে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে গুলি করেছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মেম্বার আনোয়ার তো কত কথাই বলবে সবই কি সত্য? আমার সাথে তার কোন শত্রুতা নেই বলে এড়িয়ে যান।
স্থানীয় বালিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল বলেন, চরমাদাখালী আমার এলাকার মধ্যে দুর্গম একটি এলাকা। মনিরের সাথে ঐ এলাকায় জমি নিয়ে সমস্যা হয়েছে শুনেছি। তা নিয়ে থানায় মামলাও হয়েছে। আমার কাছে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। সন্ত্রসী মনিরকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন এমন অভিযোগ করছে এলাকাবাসী এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি মনিরকে শেল্টার দিবো কেন? আমি তো আওয়ামীলীগ করে নিজেই বেকায়দায় আছি। বর্তমান এমপি বা ক্ষমতায় যারা আছে তার শেল্টার দিবে। আমি প্রভাব খাটালে অন্যরা আমার বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দিতো, ভেকু পুড়িয়ে ফেলতো।
ত্রিশালের সার্কেল এএসপি অরিত সরকার বলেন, বালিপাড়া ইউনিয়নের চর মাদাখালী নতুন চরে একটি ঘর দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমি আগামী শুক্রবার ওসি সাহেবকে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবো। মনির বা কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নিবো। যে কিশোর গ্যাংয়ের কথা বলছেন যদি তাদের কাছে সুনিদিষ্ট অস্ত্রের প্রমাণ পাই তাদের গ্রেফতার করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply