ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে বিশ টাকায় মাত্র ২০ মিনিটের সৌন্দর্য উপভোগের শর্তেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার, ১ মার্চ বিকেলে উপজেলার ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের সতের পাড়া এলাকার একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বাগানের পাশেই বড় করে একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে “অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, প্রবেশমূল্য বিশ টাকা”। প্রবেশমুখের অপর একটি সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে “ফুল ছিঁড়লে পাঁচশত টাকা জরিমানা”।
বাগান মালিক বাগানে প্রবেশের পথ আটকিয়ে জনপ্রতি বিশ টাকা প্রবেশমূল্য নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের। আজ একদিনেই পাঁচ শতাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাগান মালিক রাজিব। তবে সৌন্দর্য উপভোগে টাকা এবং সময় নির্ধারিত থাকলেও দর্শনার্থীদের মধ্যে তেমন কোন ক্ষোভ ছিল না। তারা ফুলের অপরুপ সৌন্দর্যে বিমোহিত, আপ্লূত হয়েছেন।
জানা যায়, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ নিয়ে তাদের সহায়তায় বিশ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন স্থানীয় দাখিল পরীক্ষার্থী রাজিব হাসান ও তার ছোট ভাই রেজাউল করিম। এখন বেশিরভাগ গাছে ফুল ফুটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জেনে বিপুলসংখ্যক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ বিগত এক সপ্তাহ ধরে ভিড় জমাচ্ছেন এই বাগানটিতে। লোকজনকে সামাল দিতে প্রতিদিন চার থেকে সাতজন লোক এখানে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা ও গমের চাষাবাদের পাশাপাশি বিকল্প ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন ত্রিশাল উপজেলার কৃষকেরা। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উপজেলায় সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে এক কেজি করে আরডিএস জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
ত্রিশাল উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। দর্শনার্থী স্বপ্নীল সানি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক থেকে জেনে কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখতে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। জীবন্ত ফুল গুলো যেনো হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে, সে এক অন্যরকম ভালো লাগা।’
মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা তানজিম আকন্দ নামে একজন বলেন, ‘ফুলগুলো দেখে অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করছে। কাজের ব্যস্ততার কারণে পরিবার নিয়ে দূরে বেড়াতে যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ হয় না। হাতের কাছে এমন দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুল বাগান দেখে সবারই অনেক ভালো লেগেছে, সবাই অনেক খুশি। ‘
সূর্যমুখী ফুল চাষি রাজীব হাসান বলেন, ‘আমি দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পর বেশ কিছুদিন সময় পেয়েছিলাম। তখন কৃষি অফিসের সহায়তায় আমিসহ আমার ছোটভাই মিলে ২০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ন্যায্য মূল্য পেলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে এবং আমাদের মতো আরও অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশাত মাহবুবা রহমান জানান, ‘আগে কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। আমি নিজ চেষ্টায় তাঁদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। তাদের সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া থেকে শুরু করে চাষাবাদে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।
Leave a Reply