রোহিঙ্গা নিপীড়ণই মিয়ানমারকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে

আহমাদ ফরিদ, প্রধান সম্পাদক   

0
14

অনেক আগে থেকেই মার্কিন ও পশ্চিমা প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, আইন প্রণেতা এবং সেলিব্রিটিরা মিয়ানমার নিয়ে কথা বলতে চাননা।

কিন্তু এখন মিয়ানমার কয়েক দশকের ডিস্টোপিয়ান সামরিক শাসন, দারিদ্র্য এবং বিচ্ছিন্নতার পর নতুন করে আরেকটি জান্তা শাসনে পীড়িত এক জাতি। যারা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়নমূলক সামরিক ক্র্যাকডাউনগুলির মধ্যে একটি সহ্য করে চলেছে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, একটি গৃহযুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে থেকেও দেশটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রায় অলক্ষিত। দেশটির সামরিক জান্তা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার দুই বছর পর তিনি এখন সন্দেহজনক অভিযোগে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। কিন্তু বিশ্ব মিয়ানমারের যন্ত্রণা থেকে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও কেউ কিছুই বলছেনা। কারণ কি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নজিরবিহীন সহিংসতা? অবশ্যই।

২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দেশটির সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুন সফরের সময় রাস্তায় হাজার হাজার লোকের উল্লাসের এক অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। গণতন্ত্রে উত্তরণের এই সময়কে বহু বছরের নিষেধাজ্ঞার পরে পশ্চিমা কূটনীতির বিজয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সেটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি আশার এক বিরল মুহূর্ত। এটি উপভোগ করার মাত্র এক দশক পরে দেশটিতে আবার সামরিক দুঃশাসন নেমে আসে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গণতন্ত্রে উত্তোরণের সেই আশাগুলো ২০২১ সালেই মারা গেছে।

পরবর্তী সামরিক অভিযানে এবং জাতিগত ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে অন্তত ২ হাজার ৯শ’ জন নিহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থী কর্মী, সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীকে। বহু মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা – একটি প্যারানয়েড এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী জান্তার অধীনে বছরের পর বছর নাজুক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এসব কিছুই বিশ্বের নজর এড়িয়ে গেছে।

মিয়ানমারের প্রতি বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। মিডিয়া এবং বিশ্বব্যাপী সরকারগুলি আরও গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে বোধগম্যভাবেই ব্যস্ত ছিল। সেই যুদ্ধটি মার্কিন ও ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য সত্যিকারের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পশ্চিমা অস্ত্র ইউক্রেনে ঢেলে দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমারে নয়।

অং সান সুচির কলঙ্কিত খ্যাতিও এর একটি কারণ হতে পারে। ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে, ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির এই শীর্ষনেতা সাহসিকতার সাথে সামরিক বাহিনীর বিরোধিতার কারণে ইয়াঙ্গুনের ইনিয়া লেকের পাশে তার ভিলায় বছরের পর বছর তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। দেশটিতে একবার গণতান্ত্রিক আবহ শুরু হলে বিদেশী নেতারা সেটি স্থায়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। সে সময় “লেডির” বিদেশ ভ্রমণ ছিল প্রধান ঘটনা।

কিন্তু পরবর্তীতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ নেয়ায় “এশিয়ার ম্যান্ডেলা” হিসেবে তার খ্যাতি শেষ হয়ে যায়।

রোহিঙ্গা নৃশংসতার পক্ষে সু চি’র অবস্থানকে বিশ্ব স্বাগত জানাতে পারেনি। তাকে বিতর্কিত করেছে। সু চি’র উপর সামরিক জান্তার নিপীড়ন নেমে এলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সঙ্গত কারণেই সু চি’র পাশে দাঁড়াতে অনিহা দেখিয়েছে।  

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চি’র ডিফেন্ডাররা হয়তো যুক্তি দেখাবেন যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সামরিক অভ্যুত্থানের আগেও রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের নিন্দা করতে তাকে সুযোগ দেয়া হয়নি।  যদিও  একটি নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি তার নির্মম বক্তব্য সে যুক্তিকে সমর্থন করেনা । রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর পরিচালিত সহিংসতায় সু চি’র সমর্থণ মিয়ানমারকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে  আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে।   

পোষ্ট এর সময় 4 months by Ahmad Farid

নিচে কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে