নিকলীর হাওরে ধান কাটা চললেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

মো. হেলাল উদ্দিন নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি।।

0
43
নিকলীর বালিকান্দি হাওরে চলছে ধান কাটার উৎসব

কিশোরগঞ্জের  হাওর অঞ্চল নিকলী  উপজেলার  বিশাল হাওরের এখন চারদিকে  সোনালী  ফসলের মাঠ। হাওরে পহেলা বৈশাখ থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নিকলীর হাওরের  প্রায় ৪০ ভাগ ধানের জমি  কেটে ফেলেছে কৃষক । হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটার ফলে অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা হাওরে আসেননি। এতে হাওর এলাকায়  শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শ্রমিকের মুজুরি। চড়া মজুরীতে কৃষকরা পড়েছেন আরো বিপাকে।    

তবু জীবিকার তাগিদে  কিছু সংখ্যক শ্রমিক আসলেও তাদের থাকার জায়গা নিয়ে তৈরী হয়েছে সমস্যা। অন্যান্য বছর এসব লোকজন স্কুল,মাদ্রাসা, কলেজের বারান্দায় রাত্রিযাপন করতেন, কিন্তু এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কারণে তারা  বেছে নিয়েছেন হাট বাজার। আবার অনেকেই  ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঠে কাজ করা  শ্রমিকের দৈনিক মুজুরি ১১শ থেকে ১২ শ টাকা। এরপরও চাহিদামত  ধান কাটার লোক পাচ্ছেনা  কৃষকেরা ।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় থাকায় মাঠে একরকম প্রতিযোগিতা চলছে কার আগে কে ধান কেটে গোলায় উঠাতে পারে ।

সরেজমিনে গিয়ে  টেংগুরিয়া গ্রামের  কৃষক মৃত আব্দুল ছোবানের ছেলে মুকশুধুর রহমান শান্তি   এবং দামপাড়া কামাল্পুর গ্রামের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম বলেন,  অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কৃষি উপকরণের মূল্য বাড়ায়  বোর ফসল আবাদে খরচ বেশী হয়েছে।তারা জানান, ৩৫ শতাংশ জমিতে হালচাষ খরচ ১২শ ,  বীজধান ৬ শ, বীজতলা তৈরি ৮ শ ,সার ১২শ , কীটনাশক ৬ শ , নিড়ানী ১২শ, পানিসেচ ২ হাজার ১ শ’   ধান কাটা ৪ হাজার , ধান মাড়াই , ১ হাজার ,শুকানো ও অন্যান্য ৫শ ,  জমি লিজ ৫ হাজার টাকা ধরলে প্রান্তিক চাষিদের মোট খরচ পড়েছে ১৮  হাজার  ১ শ’ টাকা।  ৩৫ শতাংশ জমিতে ধান হবে প্রায়  ১৮ মণ। বর্তমান বাজার দরে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮ শ’ টাকা দরে। এ দরে ১৮ মণ ধানের মুল্যে হয় ১৪ হাজার ৪ শ’ টাকা । তাই বাম্পার ফলন হলেও এবার হাসি নেই কৃষকের মুখে ।  

অন্যদিকে হাওরের যে সকল জমিতে   ব্রি ২৮ ব্রি ২৯ ব্রি ৮৯ ধানে ব্লাস্ট এবং ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সেই ধান কৃষক কেটে আনলেও এ ধানের ভেতরে চাল পরিপূর্ণ না হওয়ায় এসব ধান ৪ শ’ টাকা দরেও নিচ্ছেনা ব্যাপারীরা । 

হাওরে বছরে একমাত্র বোর ফসলের আবাদই হয়ে থাকে। ফলে একটি মাত্র ফসলের উপরই হাওরের কৃষকদের নির্ভর করতে হয়। বোর ফসলের ফলন দামের উপর নির্ভর করে হাওরের কৃষকদের ভাগ্য। কৃষির আয় থেকেই এখানকার কৃষক পরিবার তাদের সারা বছরের সংসার খরচ ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ,চিকিৎসাসহ সকল কিছুই  নির্বাহ করে। আর এ অঞ্চলের ৯০% ভাগ মানুষেই কৃষির সাথে  সম্পৃক্ত। এদের অনেকেই  ভুমিহীন। তারা সাধারণত অন্যের জমি লিজ নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে  অনেক স্বপ্ন নিয়ে  মাঠে ধান  আবাদ  করে থাকে।এবার বোর ধান ব্লাস্ট ও ছত্রাক রোগের আক্রান্ত হওয়ায় প্রান্তিক ও লিজি কৃষকের মাথায় হাত।

এ বিষয়ে উপজলা কৃষি অফিসার মো. বেলায়ত হোসাইনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার ১৪ হাজার ৫ শ’ হেক্টর উঁচু এবং নিচু  জমিতে বোর ফসলের ১৬ প্রজাতির  ধান চাষ করা হয়েছে । হাওরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।  কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালোভাবেই ধান কাটা শেষ করবে কৃষকেরা । ব্রি-২৮ ব্রি-২৯ ধান চাষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যদি সরকার কোনরূপ সাহায্য প্রদান করে তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত  কৃষকদের  মাঝে তা বিতরণ করা হবে।

পোষ্ট এর সময় 1 month by Ahmad Farid

নিচে কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে