ত্রিশালে আজ থেকে শুরু জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মজয়ন্তী

মো. মনির হোসেন ত্রিশাল(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি।।

0
26
অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত মঞ্চ

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টা থেকে তিনদিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মজয়ন্তীর উৎসব পালিত হবে ময়মনসিংহের ত্রিশালে।

এই দিনটি ত্রিশালবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের দিন। “নজরুল জন্মজয়ন্তী ও নজরুল গ্রামীণমেলা” এই দুই মিলে একপ্রাণের উৎসবে রুপ নেয়া দিনটির প্রতিক্ষায় থাকে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ। ওই প্রাণের উৎসবে যোগ দিতে ক’দিন আগেই দুর-দুরান্তের অনেক স্বজনরা নায়র চলে আসেন (বেড়াতে আসেন)। উপভোগ করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী দিনে বিকাল ৩টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী জাতীয় সংসদের সরকারী দলের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।

১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। বর্ধমানের আসানসোলের একটি রুটির দোকানে কাজ কাজ করতেন তিনি। তাঁর প্রতিভা ও কাজকর্মে মুগ্ধ হয়ে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর সিমলা গ্রামের কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা কবি নজরুলকে নিয়ে 

আসেন তার নিজ বাড়িতে। ওই সময়ে কাজীর সিমলায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় রফিজউল্লাহ দারোগা নজরুলকে দরিরামপুর হাইস্কুল (বর্তমানে সরকারি নজরুল একাডেমীতে) সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ত্রিশাল পৌরশহরের নামাপাড়া গ্রামের বিচ্যুতিয়া বেপারির বাড়িতে কবির থাকার ব্যবস্থা করেন 

তিনি। কবি নজরুলের পদচারনায় ত্রিশাল আজ গৌরবান্বিত এক জনপদ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিচুতিয়া বেপারি বাড়ির অদূরে শুকনি বিলের পাড়ে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিচ্যুতিয়া বেপারি বাড়ির আঙ্গিনায় নির্মিত হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র, নজরুল ইনষ্টিটিউট এবং সেমিনার কক্ষ। স্মৃতিকেন্দ্র সংলগ্ন যে পুকুরে কবি গোসল করতেন, মাছ ধরতেন, সেই পুকুরঘাট পাকা করণসহ তা আজ একটি মনোরম পরিবেশের রূপ পেয়েছে। শুকনি বিলপাড়ের সেই বটবৃক্ষটি আজো সংরক্ষিত রয়েছে যার তলায় বসে কবি তন্ময় হয়ে বাঁশি বাঁজাতেন। কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা বাড়ির আঙ্গিনায় নির্মিত নজরুল পাঠাগার ও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে নজরুলের শোয়ার খাট। কবি নজরুল দরিরামপুর হাইস্কুল অধ্যায়নকালে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিপিন চন্দ্র। তিনি শিক্ষার্থীদের কঠোর শাসনের মধ্যে রাখতেন। ওই শিক্ষকের স্মরণের “আমি এক পাড়াগাঁয়ে স্কুল পালানো ছেলে, তার উপর পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও “ক” অক্ষর খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্কুলের হেড মাষ্টারের চেহারা মনে করতেই আজও আমার জল তেষ্টা পেয়ে যায়” শ্রেণিকক্ষের সামনে কবির লেখা ওই উক্তিটি মোজাইক করে রাখা হয়েছে। মহান কবি ও তার গৌরবগাঁথা স্মৃতিকে চিরকালের জন্য ত্রিশালবাসি তাদের বুকে ধারন করে রাখতে এই মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নজরুল একাডেমী (নজরুলের বাল্য বিদ্যাপিঠ), নজরুল ডিগ্রি কলেজ, নজরুল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, 

দুখুমিয়া বিদ্যানিকেতন, কাজীর সিমলা নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়, নজরুল মেমোরিয়াল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নজরুল সেনা স্কুল, দুখু চাইল্ড কেয়ার স্কুল, কবি নজরুল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন, বিদ্রোহী কবি নজরুল স্মৃতি পাঠাগার, কবি নজরুল স্মৃতি সংসদ, কবি নজরুল কবিতা পরিষদ, কবি নজরুল জামে মসজিদ ও দুখুমিয়া থিয়েটারসহ ত্রিশালের আনাচে কানাচে অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

১৯৬৫ সন থেকেই প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন শুরু করে ত্রিশালবাসী। ১৯৯০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সর্বপ্রথম ত্রিশালে ৭ দিনব্যাপি জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মজয়ন্তী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ে অথবা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিনদিন ব্যাপী নজরুল জন্মজয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিনদিন ব্যাপী নজরুল জন্মজয়ন্তীতে অগণিত নজরুল প্রেমী ভক্ত, দেশবরেন্য কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, নজরুল গবেষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আগমন ঘটে ত্রিশালে। লাখো মানুষের পদচারনা ও নজরুল মঞ্চে নজরুল সঙ্গীতের ঝংকারে মূখরিত হয়ে উঠে এ অঞ্চল।

তিনদিন ব্যাপীসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নজরুল গ্রামীণ মেলা ও বই মেলা উপভোগ করতে বাড়িতে বাড়িতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্বজন ও নজরুল ভক্তদের ভিড় জমবে কবির বাল্যস্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় স্থান গুলোতে। নজরুল অডিটরিয়ামে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নজরুল গবেষকরা আলোচনায় অংশ নেবেন। এরপর নজরুল একাডেমির বিশাল মাঠ জুড়ে বসা নজরুল গ্রামীণমেলা’ থেকে প্রয়োজনীয় ও শখের জিনিসপত্র কিনে ফিরবেন বাড়িতে। এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ “নজরুল জন্মজয়ন্তী ও নজরুল গ্রামীণমেলা”র প্রাণের এই উৎসবের প্রতিক্ষায় দিন গুণেন প্রতি বছর।

পোষ্ট এর সময় 4 days by Ahmad Farid

নিচে কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে