কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, ইউপি সদস্যদের মারধরসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার আট ইউপি সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এর আগে ৬ এপ্রিল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগসহ শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ইউনিয়নের ১,২,৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রোকিয়া। প্রকল্পগুলোতে একেবারেই কাজ না করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের। তবে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবু সাদাৎ মো. সায়েম এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা হলেন, মো. সোহাগ মিয়া, মো. মতিউর রহমান, জুনায়েদ তুর্য্য, সারওয়ার আলম, মো. সাইদুর রহমান, আলম মিয়া, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নার্গিস আক্তার ও আছমা আক্তার।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জাফরাবাদ ইউনিয়নে উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিতে বরাদ্দের ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাৎ মো. সায়েম। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়নের আজিমগঞ্জ বাজারে পানি নিষ্কাশনের দুটি নালা নির্মাণ করেন চেয়ারম্যান। পরে চেয়ারম্যান ২০২২ সালের মে’তে নালা দু’টির অপসারণ চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাতে সায় দেননি। উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান একই মাসে অবৈধভাবে নিলাম ডেকে নালা দুটির পুরোনো মালামাল, ইট ও স্ল্যাব বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমলীতলা বাজার থেকে আজিমগঞ্জ বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারের প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজী মো. আব্দুর রউফের ফিশারী পাড় থেকে রাজকুন্তি খালপাড় ব্রীজ এবং কাইকরদিয়া প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে সুবন্দি হারেছের দোকান পর্যন্ত রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পূর্ব জাফরাবাদ রশিদের বাড়ি থেকে শাপলা কিন্ডার গার্টেন রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকা, জাল্লাবাদ মালিবাড়ি গ্রামীণ টাওয়ার থেকে মাজারুলের দোকান পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাট প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকা এবং বাদেশ্রীরামপুর নুরু ফকিরের বাড়ি থেকে সাধেরজঙ্গল আ. জব্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার বেটস ফিলিং প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাফরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাৎ মো. সায়েম বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন ইউপি সদস্যরা। আশাকরি আমার সদস্যরা তাদের ভুল বোঝতে পারবেন। খুব শিঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ বলেন, জাফরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাদাৎ মো. সায়েমের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের সদস্যদের দায়ের করা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু বলেন, জাফরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ইউপি সদস্যদের অভিযোগের পাল্টা জবাব হিসেবে জাফরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাদাত মো:সায়েমের উদ্যোগে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার, ১০ মে বিকালে জাফরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পোষ্ট এর সময় 3 weeks by Ahmad Farid